DNA ট্রান্সলেশনঃ যে প্রক্রিয়ায় mRNA কর্তৃক বাহিত জেনেটিক কোড রাইবোজোমে tRNA-এর সাহায্যে অ্যামিনো এসিড সমন্বয়ে পলিপেপটাইড তথা প্রোটিন সংশ্লেষ নির্দেশ করে তাকে ট্রান্সলেশন বলে (the process by which the genetic is code carried by mRNA directs the synthesis of proteins from the amino acids called Translation)। ট্রান্সলেশনের সামগ্রিক প্রক্রিয়াটি নিম্নোক্তভাবে সম্পন্ন হয়ে থাকে ।
ট্রান্সলেশনে প্রয়োজনীয় উপাদানঃ
১. DNA থেকে জেনেটিক কোডবাহী mRNA সূত্র যা প্রোটিন সংশ্লেষের টেমপ্লেট বা ছাঁচ হিসেবে কাজ করে ।
২. নির্দিষ্ট অ্যামিনো এসিড বহনকারী tRNAT অ্যামিনো এসিড সাধারণত ২০ রকম হলেও কোডন থাকে ৬৪ রকমের।
৩. mRNA ও RNA কে একসঙ্গে ধরে রাখতে; পলিপেপটাইড শৃঙ্খলে অ্যামিনো এসিড বন্ধনে পেপটাইড বন্ডসৃষ্টিতে; এবং ট্রান্সলোকেশন প্রক্রিয়ায় অ্যামিনো এসিড শূন্য (RNA-কে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করার জন্য রাইবোজোম অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান ।রাইবোজোমের বড় উপএককে RNA-এর জন্য পাশাপাশি অবস্থিত ৩টি বাইন্ডিং সাইট (binding site) থাকেঃ
P সাইট (Peptidyl tRNA site) : এটি বর্ধনশীল পলিপেপটাইড শৃঙ্খলবাহী tRNA ধারণ করে।
A-সাইট (Aminoacyl-tRNA site) : এটি পলিপেপটাইড শৃঙ্খলে যুক্ত করার জন্য পরবর্তী অ্যামিনো এসিড বহনকারী tRNA ধারণ করে।
E-সাইট (Exit site) : পলিপেপটাইড শৃঙ্খল গঠনের জন্য বহন করে আনা অ্যামিনো এসিড দানকারী tRNA P-সাইট থেকে সরে E-সাইটে অবস্থান নেয়, পরে বিচ্ছিন্ন হয়ে সাইটোপ্লাজমে ফিরে যায়।
৪. অ্যাকটিভেটিং এনজাইম (Activating enzyme) : নির্দিষ্ট অ্যামিনো এসিড নির্দিষ্ট tRNA-র সঙ্গে নির্ভুল বন্ধন সৃষ্টি করে । এর মূলে রয়েছে অ্যাকটিভেটিং এনজাইম নামে দক্ষ এক সেট এনজাইম। এ এনজাইমের সাধারণ নাম অ্যামিনো অ্যাসিল-tRNA সিন্থেটেজ (Aminoacyl tRNA synthetases)। প্রতিটি অ্যাকটেভিটিং এনজাইম একটিমাত্র অ্যামিনো এসিড ও তার সম্পর্কযুক্ত tRNA-এর জন্য নির্দিষ্ট থাকে। এনজাইমে তিন অংশবিশিষ্ট সক্রিয় স্থান রয়েছে। তিনটি ক্ষুদ্রাকায় অণু (যথা- একটি নির্দিষ্ট অ্যামিনো এসিড, ATP ও একটি নির্দিষ্ট tRNA) শনাক্তের জন্য সক্রিয় স্থানগুলো সদা সতর্ক থাকে। অ্যাকটিভিটিং অ্যামিনো এসিড tRNA ও একটি অ্যামিনো এসিড (AA) এর সঙ্গে নিম্নোক্ত দুই ধাপে বিক্রিয়া সম্পন্ন করেঃ
এনজাইম + ATP + AA এনজাইম-AMP - AA + PPi এনজাইম-AMP-AA+ tRNA এনজাইম +AMP + tRNA - AA
৫. “স্টার্ট” ও “স্টপ” সংকেত ("start" and "stop" signals) :৬৪টি কোডনের মধ্যে UAA, UAG ও UGA এ তিনটি কোডনের পরিপূরক অ্যান্টিকোডন একটি tRNA-র মধ্যেও নেই। এগুলোকে ননসেন্স কোডন (nonsense codons) বলে। এসব কোডন mRNA সূত্রে পলিপেপটাইড শৃঙ্খলের 'স্টপ' সংকেত হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে, mRNA সূত্রে পলিপেপটাইড শৃঙ্খলের শুরুর সংকেত দানকারী AUG কোডনকে “স্টার্ট সংকেত” বলে । রাইবোজোম প্রথমেই mRNA সূত্রের যে অবস্থানে AUG কোডন পায় সেখান থেকেই ট্রান্সলেশন শুরু হয় ।
ট্রান্সলেশনের ধাপসমূহঃ
সূচনা (Initiation)ট্রান্সলেশন প্রক্রিয়ার সূচনা পর্ব শুরু হয় একটি ইনিশিয়েশন কমপ্লেক্স (initiation complex) গঠনের মধ্য দিয়ে। কতকগুলো উপাদান নিয়ে এ কমপ্লেক্স গঠিত হয়।
উপাদানগুলো হচ্ছে : mRNA, রাইবোজোমের একটি ছোট উপএকক ও একটি বড় উপএকক এবং মিথিওনিন অ্যামিনো এসিডবাহী tRNA। উপাদানগুলোকে সঠিকভাবে সংবদ্ধ রাখতে ইনিশিয়েশন ফ্যাক্টর (initiation factors) নামে কিছু বিশেষ প্রোটিন ভূমিকা পালন করে।
নিউক্লিয়াস থেকে নিউক্লিয়ার রন্ধ্রপথে সাইটোপ্লাজমে আগত mRNA অণু রাইবোজোমের সঙ্গে যুক্ত হলে এ প্রক্রিয়ার সূত্রপাত ঘটে এবং নিম্নোক্ত ধারাবাহিক ঘটনাক্রম অব্যাহত থাকে ।
১. সাইটোপ্লাজমে mRNA অণু না পাওয়া পর্যন্ত রাইবোজোমের উপএককদুটি পৃথক থাকে।
২. mRNA অণু পাওয়া গেলে রাইবোজোমের ছোট উপএককটি প্রথমে স্টার্ট কোডন (start codon) হিসেবে পরিচিত AUG-র কাছাকাছি অবস্থান গ্রহণ করে।
৩. mRNA সূত্রে রাইবোজোম সংযুক্তির পরিপূরক অনুক্রম (sequence) শনাক্ত ও যুক্ত করতে রাইবোজোমের ক্ষুদ্র উপএককের rRNA গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ অনুক্রমটি mRNA-র 5' প্রান্তের দিকে অবস্থিত। 5'থেকে 3' প্রান্তের দিকে ট্রান্সলেশন প্রক্রিয়া এগিয়ে চলে।
৪. জেনেটিক কোডে mRNA স্টার্ট কোডন হচ্ছে AUG (মিথিওনিন)। এই কোডনের মিথিওনিনবাহী URNA-র পরিপূরক বেস জোড়বদ্ধ হলে ইনিশিয়েশন কমপ্লেক্স গঠিত হয়। অতএব, প্রোটিন শৃঙ্খলের প্রথম অ্যামিনোএসিডটি সব সময় মিথিওনিন হয়।
৫. mRNA সূত্রে মিথিওনিনবাহী RNA যুক্ত হওয়ার পর রাইবোজোমের বড় উপএককটি এসে ইনিশিয়েশন কমপ্লেক্সের সাথে সাময়িক যুক্ত হয় ।
৬ মিথিওনিনবাহী (RNA রাইবোজোমের বড় উপএককের P-সাইটে অবস্থান নেয়। তখন পাশের A সাইটে অবস্থিত mRNA কোডন উন্মুক্ত থাকে। সেখানে দ্বিতীয় অ্যামিনো এসিডবাহী IRNA যুক্ত হয়।
খ. প্রলম্বন বা সম্প্রসারণ (Elongation): ট্রান্সলেশনের এ ধাপে একটির পর একটি অ্যামিনো এসিড যুক্ত হয়ে পলিপেপটাইডকে প্রলম্বিত করে। প্রত্যেকটি অ্যামিনো এসিড সংযোগে বিভিন্ন প্রোটিনে গঠিত ইসংগেশন ফ্যাক্টর (elogation factor) জড়িত থাকে। ফলে রাইবোজোমে অবস্থিত mRNA-র কোডনে RNA-র অ্যান্টিকোডন সংযুক্তি ত্বরান্বিত হয়। ট্রান্সলেশনে প্রলম্বনের সাধারণ প্রক্রিয়াটি নিম্নরূপ।
১. দ্বিতীয় অ্যামিনো এসিডবাহী tRNA-র অ্যান্টিকোডন mRNA-র উন্মুক্ত কোডনের জন্য উপযুক্ত বিবেচিত হলে সেই tRNAটি A-সাইটে সুদৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করে।
২. রাইবোজোমের বড় উপএকক দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া ত্বরান্বিত করে (catatyzes) : ক. P-সাইটে tRNA ও তার অ্যামিনো এসিডের মধ্যেকার বন্ধন ছিন্ন করে দেয়; এবং ঐ অ্যামিনো এসিড ও A- সাইটে আগত tRNA-র সাথে যুক্ত অ্যামিনো এসিডের মাঝখানে একটি পেপটাইট বন্ড সৃষ্টি করে।
৩. পেপটাইড বন্ডের সাহায্যে A সাইটের অ্যামিনো এসিড একের পর এক P-সাইটের অ্যামিনো এসিড গ্রহণ করে পলিপেপটাইড শৃঙ্খল নির্মাণ করতে থাকে।
8. P-সাইটের tRNA থেকে যতবার অ্যামিনো এসিড বিচ্ছিন্ন হয়ে A সাইটের অ্যামিনো এসিডের সঙ্গে যুক্ত হয়। ততবার রাইবোজোম mRNA সূত্রের 53 দিকে আরেক কোডন (ট্রিপলেট) অগ্রসর হয়, ফলে tRNA সহ সাইটেরও স্থান পরিবর্তন ঘটে (যেমন- A সাইট tRNAসহ P সাইটে, P সাইটে যাবে E সাইটে ইত্যাদি)। এ প্রক্রিয়ার নাম ট্রান্সলোকেশন (translocation)। অন্যান্য ইলংগেশন ফ্যাক্টর এ প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণ করে।
৫. P সাইটের শূন্য (RNA রাইবোজোমের E-সাইটে গমন করে এবং এক সময় রাইবোজোম ত্যাগ করে সাইটোসলে (সাইটোপ্লাজমের তরল কলয়ডীয় ধাত্রবস্তু বা ম্যাটিক্স) ফিরে যায় এবং পুনরায় নির্দিষ্ট অ্যামিনো এসিড বহন করে mRNA-র নির্দিষ্ট কোডনে এসে যুক্ত হতে পারে।
৬. নতুন tRNA-র পরিপূরক বেসজোড় সৃষ্টি, পেপটাইড শৃঙ্খলের স্থানান্তর (transfer) ও ট্রান্সলোকেশন- সব মিলিয়ে প্রলম্বন চক্রটি বলতে গেলে বেশ দ্রুত সম্পন্ন হয়।
৭. যতক্ষণ পর্যন্ত রাইবোজোমের A সাইট mRNA-র স্টপ কোডন (stop codon) সংকেতের কাছে না ততক্ষণ পর্যন্ত রাইবোজোমের মাধ্যমে mRNA-র কোড পড়া (reading) ও অনুবাদ translating) অব্যাহত থাকে।
গ. সমাপ্তিকরণ (Termination):
সমাপ্তিকরণ হচ্ছে ট্রান্সলেশন তথা প্রোটিন সংশ্লেষের শেষ ধাপ। প্রক্রিয়াটি নিম্নরূপ:
১. যতক্ষণ পর্যন্ত রাইবোজোমের A সাইট mRNA-র স্টপ কোডনে না পৌঁছায় ততক্ষণ পর্যন্ত অ্যামিনো এসিড সংশ্লেষ ও পেপড়াইড শৃঙ্খলের প্রলম্বন অব্যাহত থাকে।
২.গ্রুপ কোডনগুলো হচ্ছে UAG, UAA ও UGA । এগুলো tRNA-র সঙ্গে জোড়বদ্ধ হতে পারে না এবং কোনো অ্যামিনো এসিড কোড করতে পারে না, বরং এগুলো রিলিজ ফ্যাক্টর (release factor) নামে এক ধরনের প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত থাকে।
৩. রিলিজ ফ্যাক্টর পলিপেপটাইড শৃঙ্খলে অ্যামিনো এসিডের পরিবর্তে পানি অণুর জোগান দেয়। ফলে হাইড্রোলাইসিস প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ হওয়া পলিপেপটাইড ও শেষ RNA-র মধ্যে বন্ধনে ভাঙ্গন ঘটায়।
৪. সংশ্লেষিত নির্দিষ্ট পলিপেপটাইড মুক্ত হয়ে ত্রিমাত্রিক গড়নে রূপ নেয় এবং রাইবোজোমের উপএকক দুটিও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ।
Read more